পিচ ঢালা পথ.....

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট হেড কোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা পায়ে হেঁটেই পেরোতে হবে ভেবে জয়েনিং লেটারের ফাইলটা পলিথিনে যত্ন করে মুড়িয়ে নিল নীল শার্ট পড়া ছেলেটা... ঝির ঝির বৃষ্টি হচ্ছে... আসতে আসতে বাড়ছে বৃষ্টির তেজ.... তর সইছেনা বলে রওনা দিল এর মাঝেই....
হঠাৎ ফোনটা কেঁপে উঠলো....
অসময়ের কিসের ম্যাসেজ ভেবে বিরক্তই হল...
তবু কিসের এক কৌতুহলে বৃষ্টির মাঝেও ফোন বের করলো...
অচেনা নাম্বার থেকে ম্যাসেজ
" আজ আমার এ্যাংগেজমেন্ট... ভালো থেকো তুমি,আমাকে ক্ষমা করো "
নাম্বার টা অচেনা নয়...চিরচেনা.... ৫ মাস আগে সেই ডিলিট করে দিয়েছে ফোনবুক থেকে... মেয়েটার নাম মিলি... ছেলেটা সারেক...
একটু থেমে গেল সে...
এরপর ম্যাসেজটা ডিলেট করে দিয়ে ফোন পকেটে রেখে আবার চলতে শুরু করলো....
বেশ দুই এক কিলোমিটার পথ....
অনেকটা গা ছাড়া ভাব নিয়েই হাঁটছে সারেক...
আজ অনেকটা হাল্কা লাগছে তার....
পাগলি মেয়েটা ঠিক আজ থেকে তিন বছর আগে এই দিনটাতেই বৃষ্টিতে রাস্তার মধ্যে সারেককে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল বেশ অনেকক্ষণ....
সেই প্রথম জড়িয়ে ধরা.... সারেক বাহুতে শক্ত করে আবদ্ধ করে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল মেয়েটার কান্না থামাতে... মিলি আগে অনেক বৃষ্টিতে ভিজেছে,ভিজে ভিজে কেঁদেছে... আজ খেয়াল করেনি কখন সে সারেকের বুকে মাথা গুঁজে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করলো। সারেক অবাক হয়ে ভাবে মাত্র পাঁচ মাস আগেও মেয়েটা অচেনা ছিল আর আজকে সে মেয়েটার মুখ গুজে কান্নার আশ্রয়.... কিছুক্ষণের জন্য আনমনা হয়ে গেল... প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে মিলি ক্লান্ত হয়ে যখন বুঝতে পারলো সে সারেকের বুকে তার যেন লজ্জায় মাথা কাটা যায়.... সে এক লাফে দেড় ফুট দূরে সরে যায়... সারেক হেসে ফেলে মিলির এমন ছেলেমানুষি দেখে। ভিষণ বৃষ্টি হচ্ছিল.... রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে পথচারী বেশ অবাক হয়েই দেখছিল দৃশ্য... ব্যস্ত রাস্তা ব্যস্ত জীবন... থেমে থাকার ফুসরত কারো নেই...
ধুর...!! কি সব ভাবছি আমি... নিজের উপরই রাগ হয় সারেকের....
ব্রেকাপ বলতে সেরকম সম্পর্ক তাদের ছিলোনা.... ছোট একটা অস্থায়ী সংসারের মতই ছিল তারা... প্রেমিক প্রেমিকার চেয়ে একটু বেশি কিন্তু স্বামী স্ত্রীর সামাজিক স্বীকৃতিবিহীন....
মিষ্টি একটা বউয়ের মতই নিজেকে সপে দিয়েছিল মিলি সারেকের কাছে....
বছর দুই কি আড়াই হবে বোধ হয়...
ঠিক সকাল এগারোটায় এমন ঝুম বৃষ্টি ছিল... টিনের চালে সে কি শব্দ... একা ঘরে সারেক আর মিলি... অশ্লীলতা নয়, সামাজিক অশ্লীল দৃষ্টি থেকে বাঁচতে, আর একটু আপন করে নিতে কখনো কখনো এমন সময় কাটাতো... সে যাই হোক সেবারই প্রথম ছিল...
অগাধ ভরসা না থাকলে বোধ হয় এমন সম্ভব নয়.... বাজ পড়েনি সিনেমার মত... বাজ মিলি বড্ড ভয় পেত কিন্তু সারেকের কাছে থাকলে সে ততটা ভয় পেতনা শুধু অসহায় দৃষ্টিতে সারেকের চোখে ভরসা খুঁজতো...
হঠাৎ শিলা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল... টিনের চালে গম গম করে পড়ছে মিলি আর নিজেকে সামলাতে পারলোনা ছিটকে চলে গেল সারেকের বুকে.... সারেক তার উষ্ণতা দিয়ে মিলিকে নির্ভয় দিল... মিলি ছাড়লোনা... তার দুচোখ বন্ধ... সবটুকু শক্তি দিয়ে সে জড়িয়ে ধরেছে সারেককে
- এ্যাই পাগলি আমি না আপনার কাছেই আছি...?? এত ভয় কিসের???
চোখ কান বন্ধ করে সে তখন ও সারেকের বুকে গুটিসুটি মেরে কাঁপছে.....
- সারেক আমাকে ছেড়না প্লিজ!! আমার খুব ভয় করছে! ওরে বাবারে এত্ত ভয়ংকর শব্দ আমি মরেই যাবো!!
শিলগুলো খুব পচা!
- হা হা হা হা আচ্ছা বাবা ছাড়বোনা...
চুলে হাত বুলিয়ে দেয় সারেক...
সেবারই প্রথম বুঝেছিলো এই চুল সাধারণ কোন চুল নয়.... অনেকটা রূপকথার প্রাণ ভ্রোমরের মত যার মধ্যে সারেক নিজের প্রাণ খুঁজে পেল.... যেন এর মাঝেই পেল তার মরণ.... ঠিক যেন সুবীরের গলায় দুলাইন
" আমি এই রূপ দেখে দেখে মরতে পারি
তেমনি পারি ওগো বাঁচতে, সে কথা তুমি যদি জানতে "
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভয়ে ভয়ে সারেক মিলির কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো
" মিলি একটা কথা বলবো??? "
মিলি বোকা বোকা কণ্ঠে বললো বলো
" তুমি রাগ করবে না তো..???"
এবার মিলি বাচ্চাদের মত করে বললো " ধুর রাগ করবো কেন! বলেই তো দেখো...
" তোমার চুলের গন্ধ নিবো, দেবে আমায়..??? "
মিলি এবার ফিক করে হেসে দিলো.... মুখ তুলে সারেকের দিকে তাকালো আরও হাসি পাচ্ছে তার সারেকের বোকা বোকা চেহারা দেখে....
সারেক এমন একটা ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে যেন সে বড় অন্যায় করে ফেলেছে কিন্তু পাগলিটা হাসছে কেন....
আবার সারেকের বুকে মুখ গুজে দিলো মিলি
এবার অনেকটা লাজুক কণ্ঠে বললো সবই আপনার, আপনার সম্পদ আপনি নিবেন আমাকে বলার কি আছে???
সারেক ঠিক বুঝে উঠতে পারে না কথাটার মর্ম... সে ভাবলো মাত্র তো বছর হল... এ যুগের ছেলে আমি, কি করে এমন অন্ধ বিশ্বাস করে এত ভরসা কোথায় পায়..??? সে ভেবে পায়না... বুক ভরে গন্ধ নিলো সে.... পাগল করা সে গন্ধ... পৃথিবীর আর কোথাও এমন গন্ধ নেই... থাকা সম্ভব ও না...
মিলি অনেক লজ্জা পেয়ে আরও গুটি সুটি মেরে গেল সারেকের বুকে....
একটু চাপ দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সারেক.....
পরম সুখে নিজেকে সপে দিয়েছিল মিলি....
বৃষ্টি অনেকটাই কমে গেছে....
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে সারেক ভাবছিলো এত সুখ কি তার সইবে???
সে বাড়াবাড়ি করে ফেলছেনা তো...??
অনধিকার চর্চা হয়ে যাচ্ছেনা তো...??
আসতে করে বললো....
মিলি... আমি কি সত্যি এতটা পাওয়ার যোগ্য..??? এত অধিকার কি আমার আছে..??? অনধিকার চর্চা করে ফেলছি না তো...???
কণ্ঠটা শেষদিকে ধরে এসেছিলো সারেকের...
এত সুখ, হারানোয় ভয়, আবেগ আরও অনেক কিছু ঘুরছিলো সারেকের মাথায়
কিছুক্ষণ চুপ থেকে সারেকের বুক থেকে মুখ তুললো মিলি
শক্ত করে ধরে থাকা পিঠে চাপ টা হাল্কা হয়ে যাচ্ছে অনুভব করলো সারেক
কিছুক্ষণ নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে সারেকের চোখে তাকিয়ে হাত দুটো সারেকের মাথার পিছনে আর ঘাড়ে জড়িয়ে নিয়ে আচমকাই সারেকের ঠোঁটে ঠোঁট গুঁজে দিলো মিলি....
নাহ সারেক আর ভাবতে পারেনা.... সে আনমনে হাঁটছে
তার শুধু মনে পড়লো সেবার মিলি বলেছিলো তোমার সামনের এই এই পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চির ছোট্ট মাংসপিন্ড, বুকের খাঁচায় বন্দি ছোট্ট মন, এসব কিছুই শুধুই তোমার.... এখানে আর কারো কোন অধিকার নেই......
কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু এঁকে দিয়ে কেঁদেই ফেলেছিলো সেবার সারেক.....
নাহ এখন সে কাঁদছেনা.... চারদিকটা দেখছে.. কি অদ্ভুত সব প্রকৃতি... সব কিছুই নরমাল তারপর ও যেন অদ্ভুত....
শেষ যেবার সে এখানে এসে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গিয়েছিলো সেবারের কথা মনে পড়লো... কিছুই পরিবর্তন হয়নি তবু কেমন জানি অদ্ভুত লাগে তার কাছে....
তার হাত ঘড়িটা ভিজে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই... বেশ দামী ঘড়ি... মিলি কিছুদিন পর পরই ঘড়ি আর চশমা কিনতো সারেকের জন্য... এটা পাঁচ নাম্বার ঘড়ি... পুমা ব্র্যান্ডের কালো আর কমলা ডোরাকাটা ঘড়ি....
চোখের সবুঝাভ সানগ্লাসটা মিলির দেওয়া দ্বিতীয় সানগ্লাস... আর ফরমাল শার্টটা দেড় বছর আগে মিলি দিয়ে বলেছিলো প্রথম চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছো... তোমার সব প্রথম জুড়েই শুধু আমি থাকবো....
সেবার কোন সুসংবাদ দিতে পারেনি সারেক মিলিকে....
হতাশ হয়ে ফিরে গিয়েছিলো....
মিলি মিষ্টি হেসে বলেছিলো
" ধুর পাগল, এবার হয়নি তো কি হয়েছে... পরেরবার নিশ্চয় হবে.... আমি জানি তুমি পারবে সারেক....
সারেক মাথা নিচু করে শুধু অবাক হয়েছিল কি করে এত ভরসা রাখে মিলি তার উপর....
ওদিকে মিলির বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ...
সবে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার কিন্তু বাসা থেকে চাপের শেষ নেই... মেয়ে ফেলে রাখতে পারবেনা... কত কত উঁচু উঁচু সব সম্বন্ধ আসে... মেয়ে দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি লক্ষী.... এ যুগের সাথেও যেমন মানিয়ে চলতে পারে তেমনি শালীনতা সংসার জ্ঞান আদিম যুগের মতই প্রখর ছিল...
সারেক সবে তখন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী.... ভেবেছিল আর্মি অফিসার হয়ে সগৌরবে মিলিকে বিয়ে করে নিয়ে আসবে....
ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে বেড়িয়ে সে বড় রাস্তায় এসে পড়েছে.... ব্যস্ত নগরী ঝুম বৃষ্টিতে যেন একটু চুপসে গেছে, দূরে একদল পথশিশু খালি প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ফুটবল খেলছে বৃষ্টিতে ভিজে....
রাস্তার মোড়ে স্কুল ইউনিফর্ম পড়া মিষ্টি একটা ছেলে আর কিউট একটা মেয়ে হাত ধরে ভিজতে ভিজতে হাঁটছে....
সেদিকে তাকিয়ে আনমনেই হেসে উঠলো সারেক... সে ভাবে এই মেয়ের ও একদিন বিয়ে হয়ে যাবে তাই না???
একটা দীর্ঘশ্বাস..
বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে....
অচেনা শহরে তার দম বন্ধ হয়ে আসে
এ ব্যস্ত নগরী যেন বড়ই যান্ত্রিক আর অচেনা
সারেক বাড়ি ফিরবে দুপুরের বাসেই... আগেরবার ও এমন করেছিল সে....
অবশ্য তার কারণ ছিল.... ওদিকে তৃষ্ণার্ত দুটো চোখ তার অপেক্ষায় ফুলে লাল হয়ে ছিল.... চোখদুটো আজ তার অপেক্ষায় নেই এ কথা মনে হতেই প্রথমবারের মত বুকের কোথায় যেন ঠান্ডা একটা শিহরণ অনুভব করলো সারেক....
ভিজে একটু ঠান্ডা লাগছে তার.... বাতাস হচ্ছে তো তাই....
এক পৌষের সকালে লেপের মধ্যে শুয়ে ফোনে বেশ চিন্তিত হয়েই প্রশ্ন করেছিল সারেক
আচ্ছা মিলি বাবা মা যদি আমাকে মেনে না নেয়??? যদি জোর করে তোমায় বিয়ে দিয়ে দেয়..???? মিলি উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো " আমার হাত কখনো ছাড়বেনা তো...??"
সারেক যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা....
সে আবার বলে মিলি আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা, বি সিরিয়াস
মিলি হেসে বলেছিলো জোর করে দিলে আর কিই বা হবে..?? বিয়ের রাতে আমি পালিয়ে তোমার কাছে চলে আসবো তারপর আমরা চট্টগ্রাম চলে যাবো, সেখানে ছোট্ট একটা বাসা হবে এরপর সে তার সংসার সাজায় খুঁটিনাটি বিবরন সহ.... জানালার পর্দা থেকে এ্যাটাস্ট বাথ কিছুই বাদ রাখেনা.....
সব শেষে বলেছিলো আমি তো শুধু তোমার সারেক, সব তোমাকে দিয়ে বসে আছি অন্যকারো হবো কি করে????
যে যতকিছুই করুক আমি শুধু তোমারই সারেক... আমাকে নিয়ে যাও প্লিজ এখান থেকে তোমার কাছে....
একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে খানিক একাই হাসে সারেক.... বাসগুলো সব এমন বৃষ্টিতেও ভরা...
সারেকের অস্বস্তি হচ্ছে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে সে দ্রুত বাসায় ফিরতে চায়.... তার ঘরের দরজা লাগিয়ে সুনীলের কবিতা পড়বে.... গান শুনবে
" এই একলা ঘর আমার দেশ
আমার একলা থাকার অভ্যেস "
এরই মধ্যে একটু ফাঁকা পেয়ে সে উঠে পড়লো এক বাসে...
জানালার পাশে বসে শেষদিকের কথাগুলো ভাবছিলো.....
এক বছরেই যেন মিলি অনেকটা ম্যাচিউরড হয়ে উঠেছিলো....
শেষ যে বার ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয় সারেক মিলি তখন আর অন্ধ ভরসা রাখতে পারেনি, তার বিশ্বাসের ভিত কেঁপে গিয়েছিলো... তার দুমাস পরের সার্কুলারেও যখন ব্যর্থ হল সারেক তখন সে মিলির বিশ্বাসে গভীর ফাটল দেখতে পেলো....
মিলি বলেছিলো বাবা মা কে কষ্ট দিয়ে সুখী হওয়া যায়না...
অনেক সামাজিক হয়ে গিয়েছিলো সে আবেগ ভুলে...
বলেছিলো আমি মেয়ে... তোমার সাথে যদি পালাই বা তোমার কথা বাসায় বলি আমার পরিবারের মান সম্মান থাকবে???? আমার জন্য বাবা মা আর ছোটকে এত বিপদে কি করে ফেলবো আমি...???
সারেক শুধুই অবাক হয়ে শোনে সেদিনের কথাগুলো.... সেদিন মিলি সারেকের অনেক দোষ তুলে ধরেছিলো....
বলেছিলো সারেক নাকি কোনোদিনিও মিলিকে বুঝতেই পারেনি তাই এত ঝামেলা আজ....
মিলি বলেছিল না জানি আমাদের যদি বিয়ে হয়েও যায় তাহলেও আমরা সুখী হতে পারবো তো আদৌ..???
সারেক কিছুই বলতে পারেনা.... সে অবাক হয়ে ভাবে এর ভরসা এত অন্ধ বিশ্বাস অগাধ প্রেম এত দ্রুত লুকলো কোথায়..??? সে পুরোনো মিলিকে খোঁজে... মিলি জানিয়ে দেয় সময়ের সাথে সব পরিবর্তন হয়ে যায়....
সেদিনের পর থেকে আর সারেককে ভরসা করতে পারেনি মিলি, নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলো তার কাছে থেকে....
ছোটখাটো বিষয়ে অন্যরকম এক ঝগড়া বাঁধতো কেমন খাপছাড়া ধরণের সে ঝগড়া... আসতে আসতে নীরব হয়ে যায় সারেক.... একটু একটু করে আড়ালে চলে যায় মিলি....
এক ঘন্টা কথা না বলে থাকতে না পারা মানুষগুলো একদিন পুরো চব্বিশঘণ্টা কোন যোগাযোগ রাখেনা.... এক নজর না দেখে থাকতে না পারা চেহারাদুটো আর কখনো সামনে আসেনা....
অভ্যেস হয়ে যায়....
একদিন থেকে তিন দিন.... এক সময় সপ্তাহে দুই একদিন কথা হত... এরপর এক লম্বা বিরতি দিয়েছিল সারেক.... লুকিয়ে ছিল এবার সে নিজেই... আড়াল নিয়েছিল মিলির কাছে.... যেন দুরত্বই তাদের আবার নতুন করে ভালোবাসতে বাধ্য করে.... বুঝতে পারেনি এতবড় গ্যাপ হয়ে গেছে....
ভাবতে ভাবতে বাস চলে আসে গাবতলী স্ট্যান্ডে... নামার পর বুঝতে পারে ভাড়া দেওয়া হয়নি... কে জানে হয়তো চেয়েছিল সে বুঝতে পারেনি, আনমনে চেয়ে ছিল জানালার বাইরে.... সে দৌড়ে যেয়ে ভাড়াটা দিয়ে আসে... এমন আচরণে বেশ অবাক হয় কন্ডাক্টার ভাবে এ কেমন অদ্ভুত ছেলে রে বাবা....
এরপর সে কোচে ওঠে.... লম্বা যাত্রা... দেরি করতে হয়নি বেশী.... পিছনের সিট ফাঁকাই ছিল বাস প্রায় ছেড়েই দিচ্ছিল। সে উঠে পড়েছে...
পিছনের সিটে সে একা... সাধারণত এসব বাসে পিছনের সিট ফাঁকাই থাকে ঝাকি হয় বলে.....
অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে নিজের সাথে যুদ্ধ করে প্রায় ৪৭ দিন পর সে ফোন দেয় মিলিকে....
সেই অস্ফুট কণ্ঠস্বর.... চঞ্চলতা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে.... এমন মিলিকে দেখে সারেকের দম বন্ধ হয়ে আসে আজকাল....
নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে কি করে কি হল
??
মিলি ধীর শক্ত কন্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে স্বাভাবিকভাবে জবাব দেয় আজ সকালে দেখতে এসেই পছন্দ করে রিং পড়িয়ে গেছে, রাতেই বিয়ে পড়িয়ে রাখতে চায়..... ছেলে পক্ষের বড্ড নাকি তাড়া কিসের জানি.....
এরপর আর কেউ কথা বলতে পারেনা.....
দুটো হৃদয় যেন চোখের সামনে বেরিয়ে এসে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে.... মিলি আজ এক অদ্ভুত শূণ্যতা অনুভব করে... সে দিগবিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, চিৎকার করে কেঁদে ওঠে ফোনটা কান থেকে ফেলে
সারেকের বলা হয়ে ওঠেনা কিছুই
সে অনুভূতীহীন হয়ে পড়ে.....
দূরে কোথাও বেজে ওঠে
" চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো.........................................."
বাস আপন গতিতে এগিয়ে চলে অচেনা হয়ে যাওয়া চিরচেনা শহরের দিকে...........

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আহবান

চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো......

ফরেস্ট গ্রিন